লিখেছেনঃ বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক হাফেজ মাওলানা হোসাইন আহমদ চাঁদপুরী
এই ব্যাপারে কুরআনের নির্দেশ হলোঃ ﴿خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ﴾﴿وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ ۚ إِنَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ﴾﴿إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ﴾ ﴿وَإِخْوَانُهُمْ يَمُدُّونَهُمْ فِي الْغَيِّ ثُمَّ لَا يُقْصِرُونَ﴾ ‘হে নবী, কোমল ও ক্ষমা সুন্দর নীতি অবলম্বন কর। ‘মারূফ’ কাজের নিদের্শ দিয়ে যাও এবং মুর্খদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়ো না। শয়তান কখনো যদি তোমাকে উস্কানী দেয়-তবে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। তিনি সব জানেন, সব শুনেন। প্রকৃত পক্ষে যারা মুত্তাকী, তাদের অবস্থা তো এরূপ যে, শয়তানের প্ররোচনায় কোনো খারাপ খেয়াল যদি তাদের স্পর্শ করেও তারা সাথে সাথে সাবধান ও সতর্ক হয়ে যায়। অতঃপর (তাদের সঠিক করণীয় কি) তা তারা সুস্পষ্টভঅবে দেখতে পায়। বাকী থাকলো তাদের (শয়তানের) ভাই বন্ধুদের কথা। এদের তো শয়তান বক্র পথে টেনে নিয়ে যায়। এবং এদের বিভ্রান্ত করার ব্যাপারে তার কোনো ত্রুটিই করে না’। (আরাফঃ ১৯৯-২০২)
§ উপরোক্ত আয়াতে রাসূল সা. কে উদ্দেশ্য করে অনাগত পৃথিবীর সকল দায়ীদের দাওয়াত ও তাবলীগ এবং হেদায়াত ও সংস্কার সংশোধনের হিকমাত বিষয়ে কয়েকটি বিষয় শিক্ষা দেয়া হয়েছে। যেমনঃ
দায়ী কোমল, বিনয়ী, ধৈর্যশীল ও উদারচিত্ত হওয়া।
দায়ী দাওয়াত মারুফ তথা সোজা ও সুস্পষ্ট কল্যাণের শিক্ষা দিয়ে–কঠিন দর্শন ও তাত্ত্বিক কথা দিয়ে নয়।
দায়ীকে দাওয়াত দিতে হবে সত্য অনুসন্ধানে আগ্রহী লোকেদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে–বিতর্ক এড়িয়ে।
দায়ী মন মেজাজে উত্তেজনা অনুভূত হলে তা শয়তানের প্ররোচনা মনে করতে হবে।
দায়ী কোমল, বিনয়ী, ধৈর্যশীল ও উদারচিত্ত হওয়া। · নিজ কর্মীদের ক্ষেত্রে–কোমল ও প্রেমময়। · সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে–দরদী ও সহানুভূতিশীল। · বিরোধীদের ক্ষেত্রে–সহিষ্ণু। · কঠিন ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশে–ঠান্ডা মেজাজ। · কঠিন বিরুদ্ধবাদীদের ক্ষেত্রে–কটিন বিরোধিতা। · নিজ সহকর্মীদের ক্ষেত্রে–দূর্বলতা বরদাশত করা। · অসহনীয় কথার ক্ষেত্রে–উদারচিত্তে এড়িয়ে যাওয়া। · বিরোধীদের শক্ত কথা, মিথ্যা, অপবাদ, জ্বালা যন্ত্রণা, দুষ্কৃতিমূলক বাঁধার ক্ষেত্রে–উদার ও ক্ষমার দৃষ্টিতে হজম করা। · কঠোরতা, কড়া ব্যবহার, তিক্ত কথা–বার্তা এবং প্রতিশোধ মূলক উত্তেজনা দাওয়াতের কাজে বিষের ন্যায়–যার পরিণতি দাওয়াতের কাজ ভেঙে চুরমার হয়। · রাসূল সা. বলেছেনঃ · আমার রব আমাকে আদেশ দিয়েছেন যে, ‘আমি ক্রোধ সন্তোষ উভয় অবস্থাতেই ইনসাফের কথা বলবো। যে আমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবে আমি তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করবো। যে আমাকে আমার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে, আমি তাকে তার ন্যায্য অধিকার প্রদান করবো। যে আমার প্রতি যুলুম করবে, আমি তাকে মাফ করে দেবো’। · রাসূল সা. যাদেরকে দাওয়াতের কাজে পাঠাতেন, তাদের হেদায়াত দিতেন এভাবেঃ عن أنس رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يسِّروا ولا تعسِّروا، وبشِّروا ولا تنفِّروا ‘তোমরা যেখানেই যাবে, তোমাদের আগমন যেনো লোকদের কাছে সুসংবাদের বিষয় হয়-ঘৃণা ও অসন্তোষের ষিয় নয়। তোমরা লোকদের জন্যে সহজতা বিধানকারী হবে-কাঠিন্য ও কঠোরতা বিধানকারী নয়’। (বুখারী ও মুসলিম) · আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা রাসূল সা. এর এই গুণের প্রশংসা করে বলেছেনঃ ﴿فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ﴾ ‘এটা আল্লাহরই অনুগ্রহ যে, তুমি লোকদের প্রতি খুবই বিনম্র। নতুবা তুমি যদি পাষাণাত্মা ও রূঢ় ব্যবহারকারী হতে তবে এসব লোক তোমার চতুস্পার্শ্ব থেকে সরে যেতো’। (আল ইমরানঃ ১৫৯)
দায়ী দাওয়াত মারুফ তথা সোজা ও সুস্পষ্ট কল্যাণের শিক্ষা দিয়ে–কঠিন দর্শন ও তাত্ত্বিক কথা দিয়ে নয়। · মানুষ যা মারুফ বা ভাল বলে মনে করে অথবা সাধারণ বুদ্ধিতে যা ভাল মনে করা যায় তার দিকে দাওয়াত দেয়া। · সাধারণ দাওয়াত সাধারণ মানুষ ও সুধীদের সহজে প্রভাবিত করে। · এটা হলো দাওয়াতের হিকমাত–যার মাধ্যমে রাসূল সা. সফলতা লাভ করে। · এটা হলো হিকমত–যার মাধ্যমে রাসূল সা. এর পর পার্শবর্তী দেশ সমূহের প্রায় সকল মানুষ মুসলমান হয়ে যায়।
দায়ীকে দাওয়াত দিতে হবে সত্য অনুসন্ধানে আগ্রহী লোকেদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে–বিতর্ক এড়িয়ে। · দাওয়াত হবে যারা যুক্ত ও বুদ্ধির সাথে দাওয়াত বুঝতে প্রস্তুত, তাদের প্রতি। · তর্ক, ঝগড়া ও তিক্ত কথার জবাব দেবে না। · তর্ক করলে অর্থহীন কাজে সময় নষ্ট হয়–যা প্রচার, প্রসার ও সংশোধনে ব্যয় হওয়া উচিত।
দায়ী মন মেজাজে উত্তেজনা অনুভূত হলে তা শয়তানের প্ররোচনা মনে করতে হবে। · এক্ষেত্রে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে হবে, যাতে দাওয়াতে হকের ক্ষতি হয় এমন কোন তৎপরতা দায়ী কর্তৃক সংঘটিত না হয়। · দাওয়াতে হকের কাজ সব সময় ঠান্ডা দিলে হতে হয়। · দাওয়াতী কাজে বাঁধার শয়তান প্ররোচনা দিতে অনেক বড় বড় ধোঁকা ও ধর্মীয় পরিভাষার ব্যবহার করে। · শয়তানী কাজ ও ওয়াসওয়াসা এবং খারাপ চিন্তা অনুভব হতেই সাবধান ও সতর্ক হওয়া মুত্তাকীর গুণ। · শয়তানের ওয়াসওয়াসার সামনে টিকতে পারেনা যারা, তারা আত্মপূজার অন্ধকারে নিমজ্জিত।