তৌহিদুল ইসলাম۔ তৌহিদ
ঢাকার অত্যন্ত জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সায়েদাবাদ। ১৯৮৬ সালে এখানে পতিষ্ঠা লাভ করে আর.কে. চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বেগম নূরুন্নাহার। তার সঠিক শিক্ষকতার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতায় না থাকার কারণে বিজ্ঞাপন জালিয়াতি ও অভিজ্ঞতা সনদ জাল করে নানারূপ দুর্নীতির মাধ্যমে প্রাধান শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ২০০০ সালে তিনি এম.পি.ও ভুক্ত হন। তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার সময়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল এক হাজারের কাছাকাছি। বর্তমানে এ সংখ্যা কমে প্রায় একশোতে এসে দাঁড়িয়েছে। তার জালিয়াতি ও দুর্নীতি সম্পর্কে ‘দৈনিক আমাদের সময়’ এবং ইত্তেফাক পত্রিকায় তিন তিন বার প্রকাশিত হলে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে ঢাকা জেলা প্রশাসক কর্তৃক তদন্ত করানো হয়।তদন্তে তার জালিয়াতি, দুর্নীতি, অনিয়ম সবই প্রমাণিত হয়। শিক্ষা মন্ত্রনালয় তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে বাবুল কুমার সাহা, উপ-সচিব স্বাক্ষরিত পত্রে বিদ্যালয়ের সভাপতিকে প্রধান শিক্ষিকা নূরুন্নাহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নিদের্শ দেন। যার স্মারক নম্বা শিশা:১১/৬-১৪/২০০১-৫ তারিখ ১৩.০৪.২০০৮ । এবং তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা শিক্ষা মন্ত্রনালয়কে অবহিত করার জন্য বলা হয়। কিন্তু কমিটির পক্ষ থেকে তা জানানো হয়নি। পরবর্তীকালে কেন জানানো হয়নি এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে কৈফিয়ত চাওয়া হয়নি। এটা ছিল শিক্ষা মন্ত্রনালয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের সামিল অথবা ধরে নেয়া হবে ম্যানেজ করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষিকা তার পছন্দ মত পকেট কমিটি গঠন করেন। কমিটি স্কুল পরিচালনা করেন না, শিক্ষিকা কমিটির সদস্য নিয়োগ দেন। কমিটির সদস্যদের সাথে সাথে দহরম মহরম থাকায় তার বিরুদ্ধে অদ্যাবধি কোনোরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এক সময় সাবেক সভাপতি আর.কে. চৌধুরী স্কুল থেকে একটি মাসোহারা নিতেন বলে জানা গেছে। নূরুন্নাহারের বিরুদ্ধে তদন্ত চলাকালে যারা তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদেরকে তিনি বিভিন্নভাবে হয়রানী করেছেন। এমন কী একজন শিক্ষকের এম.পি.ও. বিল ৩১ মাস পর্যন্ত বন্ধ রাখেন। শিক্ষা অফিসের ডিজি তিন তিন বার উল্লেখিত টাকা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়ার পরও আজ পর্যন্ত সে টাকা উত্তোলন করতে পারেননি। কেন উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি, এ বিষয়ে ডিজি সাহেব কোনো কৈফিত তলব করেননি। তারপরও শিক্ষা অফিসের ডিজি সাহেবকে কলা দিখিয় বহাল তফিয়তে আছেন। উক্ত প্রধান শিক্ষিকা নূরুন্নাহারের দায়িত্ব গ্রহণ কাল থেকেই বিদ্যালয়ে অর্থিক লেন দেনের কোনো নিয়ম ছিল না। কোনো খাতাপত্র মেনটেইন করা হত না। তার পকেট নোট বুকে লিখে রাখতেন। মনে করা হত এটা তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। তিনি কখনো এক সাথে বিল করে শিক্ষকদের বেতন দিতেন না। এ জন্য শিক্ষকরা তার প্রতি অসন্তুষ্টু ছিলেন। এমন কী ২০০৭/০৮ সাল থেকে বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবও মেনটেইন করেননি। তার সময় থেকে বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক কর্মচারী বিদ্যালয় থেকে কোনো বেতন ভাতা পাননি। উন্নয়নের নাম করে তিনি বিভিন্ন বিল ভাউচরের মাধ্যমে পকেট কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরী হারানোর ভয় দেখিয়ে বিল ভাউচরগুলোতে স্বাক্ষর করিয়ে নিতেন। ইতোমধ্যে তিনি বিদ্যালয় থেকে এভাবে কমপক্ষে চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি খেয়াল খুশি মত রেজুলেশন তৈরী করে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের কমিটির সভাপতি এবং সদস্যদের বাসায় পাঠিয়ে রেজুলেশনে স্বাক্ষর সংগ্রহ করে নিতেন। অধিকাংশ শিক্ষকের এম.পি.ও.ভুক্ত করার সময় তাদের শপথ করানো হয় যে তারা কখনা প্রধান শিক্ষকের বিপক্ষে কথা বলবেন না। তিনি শিক্ষা বিভাগের সকল অফিসের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়মিত মাসোহারা দিতেন বলে জানা গেছে। এবং তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গেলে তারা সাথে সাথে তাকে অবিহিত করেন, যাতে তিনি সতর্ক হয়ে যান।তিনি স্থানীয় কিন্টাগার্টেনের জে.এস.সি. এবং এস.এস.সি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তার স্কুল থেকে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করেন এবং তিনি এভাবে বছরে ২৫/৩০ লাখ টাকা আয় করেন, কিন্তু শিক্ষকদের কোনো টাকা দেয়া হত না।
রেজুলেশনের মাধ্যমে তার বেতন ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার টাকা। অথচ শিক্ষকদের বেতনের কোনো কথা তাতে উল্লেখ নেই। অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রধান শিক্ষিকা নূরুন্নাহার এবং শিক্ষকদের মধ্যে এ নিয়ে আনেক সময বাকবিতন্ডা হয়েছে। ফলে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা কমতে থকে। নিয়ম মোতাবেক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের যোগ্যতা কমপক্ষে বিএ. সেকেন্ড ক্লাশ থাকতে হবে, অথচ তিনি ডিগ্রিতে রেফার্ডসহ পাস করেন, যা প্রধান শিক্ষক হওযার যোগ্যতার মাপকাঠি নয়।প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য এম.পি.ও.ভুক্ত হওযার পর ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা অর্জন দেখিয়ে পরবর্তী প্রধান শিক্ষককে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আপসারণ করে নিজে প্রধান শিক্ষক হয়ে যান। এ বিষয়ে কমিটি তাকে সাপোর্ট দিত। বর্তমানে কিমিটির নির্বাচিত সভাপতি জনাব গিয়াস উদদ্দিন সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে স্কুলের অনিয়ম এবং প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে পূর্বর্তী কিমিটি কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষিকার কাচে তার ব্যাখ্যা জানতে চান এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনের কপি দেখতে চাইলে নূরুন্নাহার বিষয়টি নানান অজুহাতে এড়িয়ে যান। সে সময়ের কমিটির সভাপতি আর.কে. চৌধুরীকে ‘যা চাইবেন তাই দেব’ এই সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়া হয়। বর্তমান সভাপতি গিয়াসউদ্দিন দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর নূরুন্নাহারের অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি তার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তদন্ত প্রতিবেদনের কপি চাওয়া হলে অতিরিক্ত উপ কমিশনার প্রতিবেদনের কপি দিতে অস্বীকৃতি জানান। তার মানে, প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে যাতে কমিটি কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে না পারেন সে চেষ্টা তিনি করেছেন। মনে হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন দিলে রাস্ট্রীয় সেক্রেসী আউট হয়ে যাবে, তাতে দেশের অনেক ক্ষতি হতে পারে।কান্ড জ্ঞানহীন মেধাবীদের চিন্তা চেতনা তো এমনই হয়।