নিউজ ডেক্সঃ বিগত বোরো ও আমন মৌসুমে ধানের ভাল বাজারদর পেয়ে এবারও কৃষকরা বোরো ধান আবাদের দিকে বেশ ঝুঁকে পড়েছে। ফলে চলতি বোরো মৌসুমে মণিরামপুর উপজেলায় আশাতীত পরিমাণ জমিতে বোরো ধান আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে মণিরামপুর উপজেলায় উফসি জাতের ২০ হাজার হেক্টর এবং হাইব্রিড জাতের ৭ হাজার ৫’শ হেক্টরসহ সর্বমোট ২৭ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চলিতি মৌসুমে মণিরামপুর উপজেলায় উফসি জাতের ১ হাজার ৪’শ হেক্টর এবং হাইব্রিড জাতের ৫’শ৫৫ হেক্টর জমিতে ধানের বীজতলা প্রস্তুতের লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে কৃষকেরা ধানের চারা উৎপাদনের কাজে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। অতি সম্প্রতি হয়ে যাওয়া অসময়ের ভারী বর্ষনজনিত কারণে এবার ধানের চারা উৎপাদনের কাজ সম্পন্ন করতে কৃষকেরা অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে বলে কৃষকদের কাছে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে। গত দুই-তিন দিনে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ধানের বীজতলা তৈরি ও চারা উৎপাদন নিয়ে কৃষকেরা বেশ অনিশ্চিয়তার মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার ভবদহ জলাবদ্ধ অঞ্চলের এক বিশাল অঞ্চল ঘিরে বোরো আবাদ নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। ফলে চলতি বছর কাংখিত জমিতে বোরো আবাদ না হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকদের প্রনোদনা হিসেবে ৪ হাজার ৩’শ জন চাষীকে ২ কেজি হারে হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩হাজার৫’শ জন কৃষককে উফসি জাতের ধান আবাদের জন্য প্রনোদনা সহায়তার অংশ হিসেবে বিনামূল্যে উফসি জাতের ৫ কেজি ধান, ১০ কেজি হারে ডিওপি ও ১০ কেজি হারে এমওপি সার বিতরণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেচ মালিকদের খামখেয়ালী সেচের টাকা ধার্য করায় অতিরিক্ত খরচ, সার ও কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত বাজারদর, কলের লাঙ্গল দিয়ে জমি প্রস্তুতিতেও অতিরিক্ত ব্যয় এবং উচ্চমূল্য দিয়ে কৃষি শ্রমিক নিয়ে ধান আবাদ করতে কৃষকদের বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে এমন নানাবিধ ভোগান্তির কারণে কৃষকেরা ধানের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ছিলেন। কিন্তু খোলাবাজারে ধানের বাজারদর অন্যান্য বছরের তুলনায় সন্তোষজনক হওয়ায় চাষীরা ধানের বাজার দর নিয়ে খুবই খুশি। তা ছাড়া ধানের খড় ও বিচালীর বাজারদরও বেশ চড়া থাকায় অন্যান্য ফসলের আবাদ চেয়ে ধানের আবাদ এখন অনেকাটা লাভজনক জেনে কৃষকরা চলতি বোরো ধান আবাদে বেশ ঝুঁকে পড়েছে। উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ভবদহ অ্যধুষিত জলাবদ্ধ এলাকায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে এবারও বোরো ধান আবাদে বেশ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কিন্তু এলাকার ভুক্তভোগী কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে সেচযন্ত্র দিয়ে বিলের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করায় জলাবদ্ধ কিছু কিছু এলাকায় বোরো ধান আবাদ হবে বলে জলাবদ্ধ এলাকার কৃষকেরা আশা করছেন। উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌর এলাকার প্রত্যেক মাঠেই কৃষকরা বীজতলা তৈরির জন্য এখন জমি প্রস্তুত করছে ও ধানের চারা উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত কয়েকদিনের টানা শৈত প্রবাহে শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। তবুও কৃষকরা বসে নেই । শীতের বৈরিতাকে উপেক্ষা করে কৃষকরা কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন ধানের বীজতলা তৈরির কাজে। গত সোমবার সকালে উপজেলার শ্যামকূড় ইউনিয়নের হালসা গ্রামের জনৈক আহাদ আলী সরদার, মুনছুর আলীসহ কয়েকজন কৃষককে ধানের বীজতলা প্রস্তুতের কাজে খুবভোরে ব্যস্ততার সাথে কাজ করতে দেখা যায়। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বহু কৃষক এবার অন্য ফসলের আবাদ বাদ দিয়ে বোরো ধান আবাদের জন্য আগে ভাগেই ধানের বীজতলা প্রস্তুত করছেন। উপজেলার হালসা গ্রামের হাসান আলী জানান, গত বছর তিনি ২ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। এবার আরও একবিঘা জমিতে বেশী ধানের আবাদ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। ঘুঘুরাইল গ্রামের আবুল কাশেম বলেন, এবার ধানের বাজারদর ও খড়-বিচালীর দাম ভাল হওয়ায় গত বছরের চেয়ে তিনি বেশি জমিতে বোরো ধান আবাদ করছেন। উপজেলার হানুয়ার-জোঁকা-কোমলপুর গ্রামের এস.এম লুৎফর রহমান স্মৃতি সংঘ নামের একটি কৃষক সংগঠনের প্রায় ৩’শ কৃষক বিএডিসির সহযোগিতায় বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প দিয়ে ঝাঁপা বাঁওড় থেকে খুবই কম মূল্যে সেচ সুবিধা নিয়ে হানুয়ার, জোকা ও কোমলপুর মাঠে এবারও বোরো ধান আবাদ করবেন। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, জোঁকা গ্রামের আবুল হোসেন ৮ বিঘা, কোমলপুর গ্রামের আদুল গফুর ৩ বিঘা, একই গ্রামের সুভাস সিংহ আড়াই বিঘা, কার্তিক বিশ^াস ২ বিঘাসহ বহু কৃষক বোরো ধানের আবাদ করেছেন। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অধিক বলে স্থানীয় কৃষকরা জানান। উপজেলা কৃষি অফিসার আবুল হাসান জানান, ধানের বাজারদর ভাল হওয়ায় কৃষকেরা বোরো আবাদের দিকে ঝুঁকছে। আর ভবদহ অঞ্চলে পানি সেচের মাধ্যমে বোরো ধান আবাদের যে উদ্যোগ সরকারি সহয়োগিতায় স্থানীয় ভুক্তভোগী কৃষকরা গ্রহণ করেছেন সেটা সফল হলে বোরো ধান আবাদে কাংখিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে