বিশেষ প্রতিনিধিঃ মণিরামপুরের পল্লীতে কাঠ পুড়িয়ে অঙ্গার বানিয়ে একটি কয়লা উৎপাদন কারখানা নির্মাণ করা হয়েছে। যার ফলে এলাকার সবুজ গাছ-গাছালী ও পরিবেশ-প্রতিবেশ এখন হুমকির মুখে পড়েছে। জানা যায়,রাজধানী ঢাকার জনৈক ব্যবসায়ী স্থানীয় কয়েকজন স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির সহযোগিতায় উপজেলার কাসিমনগর ইউনিয়নের কুলিপাশা গ্রামে সাত সাতটি কাঠ পুড়ানোর পাঁজা নির্মাণ করে পরিবেশ বিধ্বংসী একটি কয়লা উৎপাদন কারখানা বানিয়ে চালাচ্ছে। এই কয়লা উৎপাদন কারখানায় সাতটি পাঁজায় একবার করে কয়লা উৎপাদন করতে ২১’শ মন কাঠের জ্বালানীর প্রয়োজন বলে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে। ফলে এলাকার প্রচুর পরিমাণ ছোট-বড় গাছ-গাছালী নিধন করে স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীরা এই কারখানায় কাঠ বিক্রি করে রমরমা ব্যবসা করছে। পান্তরে এই কারখানা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া আশপাশের পরিবেশকে মারাত্বকভাবে কলুষিত করছে। তাই ভুক্তভোগী এলাকাবাসী এটি বন্ধের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেন। এই নিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রকাশিত হবার পর মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে গত ৩/৪ মাস আগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। সেই সাথে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া এই কারখানা চালানো যাবে না মর্মে স্থানীয় প্রশাসন স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু সম্প্রতি প্রশাসনের বিধি নিষেধের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী আমির হোসেন বাদশাহ ও শাহিন হোসেনের সহযোগিতায় কারখানার মালিক কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই এই কারখানা চালু করে আবারও কাঠ পুড়িয়ে কয়লা উৎপাদন করছে। অতি সম্প্রতি সরেজমিন যেয়ে দেখা যায়, অবৈধ এই কয়লা উৎপাদনের কারখানায় ৮/৯জন শ্রমিক কয়লা পুড়ানোর কথিত কারখানায় কাজ করছে। কারখানার সাতটি পাঁজার সবকটির চুলাতে কাঠ বোঝায় করে আগুন দেওয়া হয়েছে। কারখানা প্রাঙ্গণে বিপুল পরিমাণ কাঠের স্তুপ করে রাখা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনৈচ্ছুক একজন শ্রমিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঢাকার এক ব্যবসায়ী স্থানীয় ইত্যা গ্রামের শাহিন ও বাদশাহ এই দুই জনের সহযোগিতায় এই কয়লা পাঁজা নির্মাণ করে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা উৎপাদন করছে। এক এক পাঁজায় ৩’শ মান কাঠ পুড়িয়ে ২৬/২৭ বস্তা করে কয়লা উৎপাদন হয় বলে ওই শ্রমিক জানান। তিনি আরও জানান, কারখানায় উৎপাদিত কয়লা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় শহরে বিক্রির জন্য ট্রাক বোঝায় করে চালান দেওয়া হয়। স্থানীয়ভাবে এই কারখানার মালিক শাহিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতির জন্য কাগজপত্র তৈরির কাজ চলছে। এই কারখানা পরিবেশ দুষণ করছে না বলে তিনি দাবী করেন। তবে এলাকাবাসীর দাবী এই কারখানার ধোঁয়া আশপাশের পরিবেশ ও সবুজ গাছপালার মারাত্বক ক্ষতি করছে এবং কাঠ পুড়ানোর কারণে প্রচুর গাছ নিধন হওয়ায় পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে এলাকাবাসী আশংকা করছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান জানান, আমি ইতিপূর্বে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে এটি বন্ধ করার বিষয়ে বলেছিলাম এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের যথাযথ অথরিটি বলে তিনি মন্তব্য করেন।