বখতিয়ার সালমান (হাটহাজারী প্রতিনিধি)
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা সহকারী কমিশনার-ভূমি অফিসের দুই কর্মচারী কতৃক গালাগাল সইতে না পেরে অপমানে এক বৃদ্ধের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মৃত আব্দুল মোনাফ(৬২) হাটহাজারী উপজেলাধীন উত্তর ফতেয়াবাদ পশ্চিম খাগড়িয়া ছড়ারকূল এলাকার বাসিন্দা।
মোনাফের মেয়ে আইরিন আক্তার জানান, গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তার বাবা এসিল্যান্ডের দুই কর্মচারী (বিজয় নন্দন বড়ুয়া) ও নিউটন বড়ুয়া) কতৃক হেনস্তার স্বীকার হন। অপমান সইতে না পেরে বৃদ্ধ রাগে,ক্ষোভে বাসায় ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তাকে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক জানান উনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পঁচিশটি ইনজেকশন দেওয়ার পর তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠলে বাসায় ফেরেন। কিন্তু অপমানের কথা উনি কিছুতেই ভুলে উঠতে না পারলে রাগে, দুশ্চিন্তায় উনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর গত ২৩সেপ্টেম্বর তাকে আবারো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
আইরিন আরো বলেন, তার বাবার করা নামজারি সংশোধনের একটি মামলা নিয়ে প্রায় তিন বছর যাবত এসি ল্যান্ড অফিসে হয়রানির স্বীকার হয়ে আসছেন। উল্লেখিত ঘটনার দিন ভুক্তভোগী আব্দুল মোনাফ তার মামলা নিষ্পত্তি কেন হবে না জানতে চাইলে তার সাথে দুর্ব্যবহার করেন এসিল্যান্ডের ঐ দুই স্টাফ।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তাদের কথোপকথনের কিছু অংশ তুলে ধরা হলোঃ
বিজয় নন্দন বড়ুয়াঃ ‘বেয়াদবের বাচ্চা থাপড়াইয়া গাল ফাটায় দেব। ওকে লাথি দিয়ে বের কর।’
আব্দুল মোনাফঃ ‘আমার কাজ শেষ না করে বছরের পর বছর ঘুরাস কেন?’
বিজয় নন্দন বড়ুয়াঃ ‘তোকে কোন(চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় গালি দিয়ে) ঘুরায়? শুয়োরের বাচ্চা একদম ফুটবলের মতো মারব। পা দিয়ে পিষে দেব।’
আব্দুল মোনাফঃ ‘মানুষকে এত কষ্ট দাও কেন?’
বিজয় নন্দন বড়ুয়াঃ ‘শালার পুতকে বাঁধ’
আব্দুল মোনাফের দিকে তেড়ে এসে আংগুল উঁচিয়ে নিউটন বড়ুয়াঃ ‘গালিগালাজ করবা, না। গালিগালাজ করলে পিঠের চামড়া তুলে ফেলব।’
দুর্ব্যবহারের পরের দিন এসিল্যান্ড স্যারকে নিজের ইচ্ছেমতো ভুলভাল বুঝিয়ে মামলা খারিজ করে দেন বলে অভিযোগ আব্দুল মোনাফের মেয়ে মিনু আক্তারের।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বিজয় বড়ুয়া বলেন, ‘আমি খারাপ আচরণ করিনি। উনি গালি দিয়েছেন বলেই আমি উনাকে বেয়াদব বলেছি আর অফিস থেকে বের করে দিতে বলেছি। বাঁধার কথা আর মারার কথা বলিনি।
হাটহাজারী সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসিল্যান্ড বলেন, ‘কেউ আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দেননি। যেই দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে তারা আমার অফিসের স্টাফ। যারা অভিযোগ দিচ্ছেন তাদের উচিত জেলা প্রশাসক স্যার অথবা আমার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করা। তখন আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারবো। ইতোমধ্যেই অভিযুক্ত দুইজনের বদলির আদেশ হয়েছে। শিগগির কার্যকর হবে।