তিন রাউন্ড গণনার পরে দ্রৌপদী মুর্মুর মোট ভোটমূল্য ৫০ শতাংশেরও বেশি। বিরোধীদের প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে বিপুল ভোটে হারিয়ে তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি (President) পদে বসেছেন। এই পদের জন্য তাঁকে বেছে নেওয়ার পর থেকেই গেরুয়া শিবিরের দাবি ছিল, নজিরবিহীনভাবে এই প্রথম আদিবাসী সমাজের কোনও প্রতিনিধিকে দেশের অন্যতম সর্বোচ্চ পদের জন্য বেছে নেওয়া হল। দ্রৌপদী মুর্মু ওড়িশা তথা সর্বভারতীয় রাজনীতিতে পুরনো মুখ হলেও এতদিন সেভাবে পরিচিত ছিলেন না। দেখে নিন দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতির রাজনৈতিক জীবন।
১৯৫৮ সালের ২০ জুন জন্ম দ্রৌপদী মুর্মুর। অর্থাৎ জন্মদিনের একদিন পরে পেলেন সুসংবাদ। বছর চৌষট্টির দ্রৌপদীর রাজনৈতিক জীবন আড়াই দশকের। বিভিন্ন সময়ে নানা দায়িত্ব সামলেছেন। ১৯৯৭ সালে পুরভোটে জিতে প্রথমবার কাউন্সিলর হন। সেই সঙ্গে রাইরংপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পান। ওই রাইরংপুর থেকেই ২০০০ ও ২০০৪ সালে বিজেপি বিধায়ক হন। দলে একাধিক সাংগঠনিক দায়িত্বও পালন করেছেন। ওড়িশার (Odissa) আদিবাসী মুখ হিসেবে তাঁকে তুলে ধরে গেরুয়া শিবির। সেই সূত্রে ২০০২ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত বিজেপির আদিবাসী মোর্চার জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য ছিলেন। ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ওড়িশা বিজেপির আদিবাসী মোর্চার সভানেত্রী। ২০১০ সালে ময়ূরভঞ্জ পশ্চিমের জেলা সভাপতিও হন দ্রৌপদী। রাজ্যপালের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। দ্রৌপদী মুর্মু ২০১৫ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল ছিলেন।
সোমবার (১৮ জুলাই) নতুন প্রেসিডেন্টকে বেছে নিতে প্রতিবেশী দেশটিতে ভোটগ্রহণ শেষ হয়। দেশটির বিরোধী দলগুলোর প্রার্থী ছিলেন যশবন্ত সিনহা এবং বিজেপি তথা এনডিএর প্রার্থী ছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু।
গত জুনে ভারতে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত ১৬ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তফসিল প্রকাশ করা হয়।
এরপর গত সোমবার ভারতের পার্লামেন্ট ও সব রাজ্য বিধানসভায় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হয়। দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে বেছে নিতে সেদিন ভারতের সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি সংসদ সদস্য ও বিধায়ক ভোট দেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, গত সোমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৯৯ শতাংশ। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনে মোট ৪ হাজার ৭৯৬ জন ভোটারের মধ্যে ৯৯ দশমিক ১৮ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এছাড়া ১০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ১০০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
এনডিটিভি বলছে, ১০ রাজ্যের বিধায়ক, সকল সংসদ সদস্যদের ভোটসহ এখন পর্যন্ত দুই রাউন্ডের ভোট গণনা হয়েছে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ১ হাজার ১৩৮ বিধায়কের মধ্যে মুর্মু পেয়েছেন ৮০৯ ভোট। যশবন্ত সিনহা পেয়েছেন ৩২৯টি। জনসংখ্যা ও বিধানসভার শক্তির উপর ভিত্তি করে মোট ভোট সংখ্যা ১ লাখ ৪৮ হাজার। এর মধ্যে মুর্মু পেয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ভোট, যশবন্ত সিনহা পেয়েছেন ৪৪ হাজার ২৭৬টি।
উল্লেখ্ করা প্রয়োজন, ভারতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয় না। সংসদ সদস্য, বিধায়কদের ব্যালটে ভোট দিতে হয়। জানাতে হয় প্রথম এবং দ্বিতীয় পছন্দও। বেগুনি রঙের কলম দিয়ে ভোট দিতে হয় সংসদ সদস্য, বিধায়কদের। সংসদ সদস্যদের জন্য থাকে সবুজ রঙের ব্যালট পেপার, বিধায়কদের জন্য গোলাপি রঙের।
Leave a Reply